কুকুর কেন ঘেউ ঘেউ করে?
আব্দুল কাইয়ুম
আপনি হয়তো ভাবছেন, কুকুরের কাজই তো ঘেউ ঘেউ করা, না হলে সে কীভাবে প্রভুভক্তির পরিচয় দেবে? যখন সবাই গভীর ঘুমে, তখন রাত জেগে কুকুর পাহারা দেয়। চোর বা কোনো দুর্বৃত্ত এলে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। কুকুরের কাজ কুকুর করবে, এর আবার কারণ খোঁজার কী আছে?
হ্যাঁ, এটা ঠিক। কিন্তু এখানে কুকুরের স্বাভাবিক আচরণের কথা হচ্ছে না। ধরুন, অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে, তার সাইরেনের শব্দ শুনে রাস্তার পাশের কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে উঠল।
অথবা বিকট শব্দে ঢাকঢোল পিটিয়ে কোনো মিছিল যাচ্ছে,
আশপাশে কুকুর থাকলে ঘেউ ঘেউ করে উঠবে। এর একটা ব্যাখ্যা হতে পারে এই যে তীব্র শব্দ সহ্য করতে পারে না বলেই হয়তো কুকুর ও রকম করে। কিন্তু একই শব্দের আঘাতে বিড়াল তো অস্থির হয়ে মিউ মিউ করে ওঠে না। কুকুরের এভাবে ঘেউ ঘেউ করে ওঠার পেছনে একটি কারণ থাকতে পারে, তা হলো, সাইরেনের আওয়াজ শুনে সে হয়তো ভাবে অন্য কোনো কুকুর ডাকছে; তাই তার প্রত্যুত্তরে সে-ও ডেকে ওঠে। এই স্বভাবজাত প্রতিক্রিয়ার ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। আদিম যুগে বনেজঙ্গলে কুকুরেরা খাদ্যের সন্ধানে দল বেঁধে ঘুরত, আর শিকার পেলেই ঘেউ ঘেউ করে একে অপরকে সংকেত প্রেরণ করত। বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য এই আচরণগত অভ্যাসটি বংশানুক্রমে কুকুর বয়ে চলেছে। সাইরেনের শব্দ হুবহু কুকুরের আওয়াজের মতো না হলেও তার সুরের ওঠানামার কোনো একটি পর্যায়কে কুকুর স্বজাতির কারও ডাক মনে করে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। অন্যদিকে বিড়াল একা একাই শিকার করে, দলবদ্ধ হয়ে থাকে না। তাই সাইরেনের আওয়াজে সে নির্বিকার। অনেক সময় দেখা গেছে, কয়েকজন বন্ধু বাসার বারান্দায় বসে সমস্বরে গান গাইছি। কেউই পেশাদার শিল্পী না হওয়ায় সুরের ওঠানামায় ছন্দপতন হচ্ছে। এ সময় হয়তো বাসার পোষা কুকুরটা এসে ঘেউ ঘেউ শুরু করল। তার কারণ, সে হয়তো ওই বেসুরো গানের কোনো একটা কলিকে স্বজাতির কারও আহ্বান ভেবে তার প্রত্যুত্তরমূলক অনুভূতি ব্যক্ত করা কর্তব্য মনে করেছে! কুকুরের ঘেউ ঘেউ করা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এ ব্যাপারে ডেসমন্ড মরিস নামের একজন ব্রিটিশ প্রাণিবিদের লেখা হোয়াই ডগস বার্ক শিরোনামের বইয়ে প্রশ্নোত্তর আকারে অনেক কিছু জানা
যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন