শফিক রেহমানের প্যারডি লিখেছেন সিমু নাসের
সন্ধ্যায় হালকা ফাল্গুনি হাওয়া বইছিল।
মইনের প্লেয়ারে বাজছিল নতুন রিলিজ হওয়া একটা জনপৃয় বাংলা সিনেমার গান আসসালামু আলাইকুম বেয়াইসাব...ওয়ালাইকুম আস সালাম বিয়াইন সাব... গানটা শুনতে শুনতে মইন ভাবছে বেয়াই এবং বেয়াইন সম্পর্কের চিরন্তন দ্বন্দ্বের বিষয়টি। সম্পর্ক কত অদ্ভুত। বেয়াই একজন পূর্ণবয়স্ক যুবক আর বেয়াইন পূর্ণবয়স্কা যুবতী। একে অন্যের প্রতি আকর্ষণ থাকবেই। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এই দুজনকে এক হতে দেয় না। সামাজিক বিভিন্ন বিধি নিষেধের কারণে দুজনের একে অপরকে পছন্দ হলেও মিলন সম্ভব নয়। বিয়ে বা এ জাতীয় কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে সামাজিক নিয়মনীতিগুলো একটু শিথিল হয়।
তখন তারা দুজনেই সেই অপরচুনিটিটা নেওয়ার চেষ্টা করে। একে অপরকে সালাম দিয়ে কথা বলতে শুরু করে।
এসব ভাবতে ভাবতেই ফোনটা বেজে উঠল এবং মইন কিছুটা ভারমুক্ত হলো। মিলার ফোন।
দেশের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন বলে মনে হচ্ছে তোমার? এই সে সেনাবাহিনীকে তাদের ব্যারাক থেকে টেনে এনে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে? মিলার সূচালো প্রশ্ন।
রাখো তোমার পলিটিক্সের অবস্থা। বিএনপি ও তার শরিক জোট খুব ভালো দেশ চালাচ্ছে, অন্ততপক্ষে আওয়ামী দুঃশাসন থেকে জনগণ মুক্তি পেয়েছে এটাই বড় কথা। আচ্ছা আসসালামু আলাইকুম বেয়াইসাব...এই গানটা কি তুমি শুনেছ? মইনের পাল্টা প্রশ্ন।
হঠাৎ তোমার মাথায় বাংলা সিনেমার গান ভর করলো কেন? হু, হাজার হাজার বার শুনতে শুনতে গানটা মুখস্থ হয়ে গেছে। আমাদের বাসার পাশের সেলুনটাতে সারাদিনই তো বাজে। মনে হয় এটা ওদের খুব ফেভারিট গান। মিলা হাসতে হাসতে জবাব দেয়।
গানটা আমাকে খুব ভাবিত করেছে। এই গানের ভেতর তাদের সামাজিক অবস্থাটা ফুটে উঠেছে। যাই হোক, তুমি জানি কী বলছিলে! মইনের গলাটা বেশ বিষন্ন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্যে সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা ও ‘যৌথ অভিযান’ নাম দিয়ে এখন সারা দেশে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ পরিচালনার সাংবিধানিক ও আইনগত দিক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এখনো বিষয়টি স্পস্ট করা হয়নি। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামল মিলা।
ভালো বলেছ। কিন্তু মিলা তুমি কী খেয়াল করেছ এই অভিযানের নাম রাখা হয়েছে ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ খুব চিন্তা ভাবনা করে দেওয়া নাম। আসলে এ অভিযানের লক্ষ সন্ত্রাস দমন-টমন নয়। সবার হার্টকে ক্লিন আই মিন পরিস্কার করাই এই অভিযানের লক্ষ্য। গত ৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনের জনগণের হার্টে যে পরিমাণ কলুষতা জমেছে, এ জোট সরকার তা শুধু পরিষ্কারের চেষ্টা করছে। এতে বাংলাদেশের মানুষের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক কমে গেল। মইন বললো। সেনাবাহিনীর এই কিন হার্ট অপারেশনের ফলে যদি এ দেশের মানুষের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমেই যায় তাহলে তো বৃটেন বা অন্যান্য ইউরোপিয়ান কান্ট্রিগুলো যেগুলোতে হৃদরোগের প্রকোপ বেশি তাদের উচিত জোট সরকারের এই ফর্মুলা ব্যবহার করে তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ভারসাম্য আনা। মিলা তরল গলায় বলল।
মইন কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তখনই সে শুনতে পেল দরজায় ঠকঠক আওয়াজ। দরজা খুলতেই কয়েকজন সেনাবাহিনীর সোলজার মইনকে পিছমোড়া করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। মইন ক্ষীণ কণ্ঠে এর প্রতিবাদ জানাতে চায় কিন্তু মেজরের এক থাপ্পড় খেয়ে চুপ হয়ে যায়। সে জানতে চায় তার অপরাধ কী? মেজর তাকে জানান, মইন বিলখেলাপী অভিযোগে অভিযুক্ত। মাল্টিমিটারিং এর এই যুগে টিঅ্যান্ডটি বোর্ড তাকে কয়েকবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও বিল পরিশোধ করেনি। তার সর্বমোট টেলিফোন বিল হয়েছে ৪ লক্ষ টাকা। মেজর তাকে আরো জানান, টিঅ্যান্ডটি এক্সচেঞ্জ লগবুক পরীক্ষা করে দেখা যায় মইনের ফোন থেকে শুধু একটা বিশেষ নম্বরেই ফোন করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা হয়। আর্মি ইন্টিলিজেন্স আরো চেক করে দেখেছে তিনি একজন বিবাহিত যুবতী এবং তাদের কথা হয় যখন যুবতীটির স্বামী বাসায় থাকেন না।
মইন আর কিছু ভাবতে পারল না।
মইন গত ২৫ দিন হয় জেল হাজতে রয়েছে। নোংরা, দুর্গন্ধময় সেলগুলোতে রাতের পর রাত কেটে যায় কিন্তু তার মামলার কোনো সুরাহা হয় না। হাজতে ঢোকানোর সময় আর্মি তার সেল ফোনটিও সিজ করেছে। মিলার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে মইনের একটা গল্প মনে পড়ল।
২৩ বছর বয়সের যুবতী ক্যাথরিন এক সন্ধ্যায় সুপার মার্কেট থেকে শপিং শেষ করে বাসায় ফিরে এসে তার বয়ফ্রেন্ড জনকে বেডরুমে অন্য এক রমণীর সংগে...
বি.দ্র: জরিপে জানা যায়, আলপিনের বেশির ভাগ পাঠকই অপ্রাপ্তবয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এই জোকটি বলা হলো না, ছাপাও হলো না। কারণ আলপিন অপ্রাপ্তবয়স্কদের পত্রিকা।
প্যারডিটি আলপিন এর ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। ২০০০ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন