পৃষ্ঠাসমূহ

স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোনো বই পড়ার সময় সাবধান। ছাপার ভুলের কারণে আপনার মৃত্যু হতে পারে। মার্ক টোয়েন, সাহিত্যিক।। আমি সব সময়ই বিখ্যাত ছিলাম, কিন্তু এত দিন সবাই জানত না। লেডি গাগা, আমেরিকান পপশিল্পী।। যদি আপনার পিতা-মাতার কোনো সন্তান না থাকে, তাহলে আপনারও নিঃসন্তান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ডিক ক্যাভেট, সাবেক আমেরিকান টিভি উপস্থাপক।। ঈশ্বর রোগ সারান কিন্তু সম্মানী নেন ডাক্তার। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, আমেরিকান রাজনীতিবিদ, লেখক ও বিজ্ঞানী।। প্রলোভনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো তার বশবর্তী হওয়া। অস্কার ওয়াইল্ড, অভিনেতা ও সাহিত্যিক।। ভুল করার পরও কেউ হাসার অর্থ হলো, সে ইতিমধ্যে দোষ চাপানোর মতো অন্য কাউকে পেয়ে গেছে। রবার্ট ব্লক, সাহিত্যিক।। আমি অনেক বছর যাবৎ আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলিনি। আমি তার বক্তব্যে বাধা দিতে চাই না। রডনি ডেঞ্জারফিল্ড, আমেরিকান কৌতুকাভিনেতা।। একজন পুরুষ বিয়ের আগ পর্যন্ত অসম্পূর্ণ থাকে এবং বিয়ের পর সে শেষ হয়ে যায়। সা সা গাবুর, হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান অভিনেত্রী।। সবার হৃদয়ে নিজের নামটি লিখুন, মার্বেল পাথরের দেয়ালে নয়। চার্লস স্পার্জান, ব্রিটিশ লেখক।। শুধু দালমা আর জিয়াননিনাই আমার বৈধ সন্তান, বাকিরা সবাই আমার অর্থ ও ভুলের ফসল। ডিয়েগো ম্যারাডোনা, সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার।। কোনো পুরুষ যদি স্ত্রীর জন্য গাড়ির দরজা খুলে দেয়, তাহলে হয় গাড়িটা নতুন অথবা তার নতুন বিয়ে হয়েছে। প্রিন্স ফিলিপ, ব্রিটেনের রাজপুত্র।। আমি শিশুদের ভালোবাসি। কারণ আপনারা জানেন কি না জানি না, আমি নিজেও শিশু ছিলাম একসময়। টম ক্রুজ, হলিউড অভিনেতা।। জীবনের সব কাক্সিত বস্তুই হয় অবৈধ, কিংবা নিষিদ্ধ, কিংবা চর্বিযুক্ত, কিংবা ব্যয়বহুল, নয়তো বা অন্য কারও স্ত্রী। গ্রুশো মাক্স, সাহিত্যিক।। যতক্ষণ আপনি কোনো ছেলেকে অপছন্দ করবেন, সে আপনার জন্য তার সর্বস্ব ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকবে। যখন আপনি তাকে ভালোবাসতে শুরু করবেন, ততণে সে তার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বিয়ন্স নোয়েলস, মার্কিন গায়িকা ও অভিনেত্রী।। আমার একটা অ্যালার্ম ঘড়ি আছে। মজার বিষয় হলো, সেটা কোনো আওয়াজ করে না। এটা আলো দেয়। যতই সময় যেতে থাকে, সেটি ততই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হতে থাকে। একপর্যায়ে আলোর চোটে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমার সেই অ্যালার্ম ঘড়িটার নাম জানালা। জে লেনো, মার্কিন কৌতুক অভিনেতা।। আমাকে একটি গিটার দাও, আমি সেটা বাজাব। আমাকে একটি মঞ্চ দাও, আমি গাইব। আমাকে একটি অডিটরিয়াম দাও, আমি তা পরিপূর্ণ করে দেব। এরিক ক্যাপটন, সংগীতজ্ঞ।। আমার স্বামীর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে আমি কখনো প্রেমে পড়িনি, কয়েকবার পা রেখেছিমাত্র। রিটা রুডনার, মার্কিন কৌতুক অভিনেত্রী ও লেখিকা।। অবিবাহিত পুরুষদের ওপর উচ্চহারে কর বসানো উচিত। তারা কেন অন্যদের চেয়ে সুখে থাকবে? অস্কার ওয়াইল্ড, আইরিশ লেখক ও কবি।। বিয়ে হলো কল্পনার কাছে বুদ্ধির পরাজয়। দ্বিতীয় বিয়ে হলো আশার কাছে অভিজ্ঞতার পরাজয়। স্যামুয়েল জনসন, ব্রিটিশ লেখক।। বিয়ে হলো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার মতোই প্রাকৃতিক, অযৌক্তিক এবং ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। লিসা হফম্যান, অভিনেতা ডাসটিন হফম্যানের স্ত্রী।। বুকমার্ক কেনার জন্য ডলার খরচ করার দরকার কী? ডলারটাকেই বুকমার্ক হিসেবে ব্যবহার করুন। স্টিভেন স্পিলবার্গ, চলচ্চিত্র পরিচালক।। আমার মনে হয়, যেসব পুরুষের কান ফুটো করা, তারা বিয়ের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত। কারণ, তারা ব্যথা সহ্য করেছে এবং অলংকারও কিনেছে। রিটা রুডনার, আমেরিকান কৌতুকাভিনেত্রী, লেখিকা ও অভিনেত্রী।। ডায়েটের প্রথম সূত্র হলো : খাবারটা যদি তোমার খেতে খুব ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই জিনিসটা তোমার জন্য তিকর হবে। আইজ্যাক আজিমভ, বিজ্ঞান কল্পকাহিনিকার।। আমার জন্মের পর আমি এত অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে পাক্কা দেড় বছর কথাই বলতে পারিনি। গ্রেসি অ্যালেন, মার্কিন কৌতুকাভিনেত্রী।। আমি কোনো দিন বিখ্যাত হতে পারব না। আমি কিচ্ছু করি না। কিছুই না। আগে দাঁত দিয়ে নখ কাটতাম। এখন তা-ও করি না। ডরোথি পার্কার, আমেরিকান রম্যলেখিকা।। আমি কখনোই আমার স্কুলকে আমার শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটাতে দিইনি। মার্ক টোয়েন, সাহিত্যিক।। সত্যবাদিতাই সর্বোত্তম পন্থা, যদি না আপনি একজন অসাধারণ মিথ্যেবাদী হতে পারেন। জেরোম কে জেরোম, ব্রিটিশ লেখক।। আলস্য পুরোপুরিভাবে তখনই উপভোগ করা সম্ভব, যখন হাতে প্রচুর কাজ থাকে। জেরোম কে জেরোম, ব্রিটিশ লেখক।। যখনই টিভিতে পৃথিবীর সব অনাহারি ও দরিদ্র শিশুকে দেখি, কান্না ধরে রাখতে পারি না। মনে হয়, ইশ, আমার ফিগারটাও যদি ওই রকম হতো। মারায়া ক্যারি, সংগীতশিল্পী।। সুষম খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো খাদ্য। ফ্র্যান লেবোউইটজ, মার্কিন লেখক।। ধূমপান মৃত্যু ডেকে আনে। যদি আপনার মৃত্যু ঘটে, তাহলে জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ আপনি হারাবেন। ব্রুক শিল্ডস, অভিনেত্রী।। বক্সিংয়ে এ পর্যন্ত ইনজুরি, মৃত্যু-দুটোই হয়েছে। কোনোটিই তেমন মারাত্মক ছিল না। অ্যালান মিন্টার, বক্সার।। অন্যের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে সব সময় যাওয়া উচিত। তা না হলে তারাও আপনার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে আসবে না। ইয়োগি বেরা, বেসবল খেলোয়াড়।। এমন কাজ তোমার করার দরকার নেই, যেটা আগামীকাল অন্যের ঘাড়ে এমনিতেই চাপবে। ডেভিড ব্রেন্ট, অভিনেতা।। আমাকে কোনো প্রশ্ন কোরো না, তাহলে আমাকেও কোনো মিথ্যা বলতে হয় না। ওলিভার গোল্ডস্মিথ, আইরিশ লেখক ও কবি।। মডেলরা হলো বেসবল খেলোয়াড়দের মতো। আমরা খুব তাড়াতাড়ি বিপুল অর্থের মালিক হই, কিন্তু বয়স ৩০ হতে না হতেই আবিষ্কার করি যে আমাদের উচ্চশিক্ষা নেই, কোনো কিছু করারই যোগ্যতা নেই। কিন্তু আমরা খুবই বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত। এমন সময় সবচেয়ে বুদ্ধির কাজ হলো কোনো মুভিস্টারকে বিয়ে করে ফেলা। সিন্ডি ক্রাফোর্ড, মডেল।। ফিলাডেলফিয়ার পথঘাট খুবই নিরাপদ। শুধু মানুষই সেগুলোকে অনিরাপদ বানিয়ে রেখেছে। ফ্রাংক রিজো, আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার সাবেক মেয়র।। সব সময় মনে রাখবেন, আপনি অনন্য। ঠিক আর সবার মতো। মার্গারেট মেড, নৃতত্ত্ববিদ।। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাগের মাথায় কখনো বাচ্চাদের মারবেন না। আমার প্রশ্ন হলো, তাহলে কখন মারব? মনে যখন আনন্দ থাকে তখন? রোজেইন বার, লেখক।। টেলিভিশন আমার কাছে খুবই শিক্ষামূলক। বাড়ির সবাই যখন টেলিভিশন দেখে, আমি তখন অন্য ঘরে গিয়ে বই পড়তে শুরু করি। গ্রুশো মার্ক্স, কৌতুকাভিনেতা।। হাল ছেড়ো না। একটা ডাকটিকিটকে দেখো। নিজ গন্তব্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত তা একটি খামের সঙ্গেই লেগে থাকে। জশ বিলিংস, লেখক।। কেউ মহৎ হয়েই জন্মায়, কেউ অনেক চেষ্টা করে মহৎ হয়। বাকিরা পাবলিক রিলেশন অফিসারদের ভাড়া করে। ড্যানিয়েল জে বুরর্স্টিন, ইতিহাসবিদ।। বাস্তব ও কল্পকাহিনির মধ্যে পার্থক্য হলো, কল্পকাহিনিকে সব সময় যুক্তিপূর্ণ হতে হয়। টম ক্যান্সি, লেখক।। অস্ট্রেলিয়ার মানুষের অন্যতম প্রিয় শখ হচ্ছে কবিতা না পড়া। ফিলিস ম্যাকগিনলে, লেখক।। চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য মানুষের ব্লাডারের সহ্যমতার সমানুপাতিক হওয়া উচিত। আলফ্রেড হিচকক, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক।।

শুক্রবার, ১৬ জুলাই, ২০১০

এই কানাবাবা! এই!!

এটি হুমায়ূন আহমেদের ‘শুভ্র’ চরিত্রের প্যারডি। পার্শ্বচরিত্র হিসেবে আছে হিমু ও মিসির আলী। হুমায়ূন আহমেদের প্যারডিটি লিখেছেন সিমু নাসের 
‘মা, আমার চশমা, আমার চশমা কোথায়, মা?’
শুভ্র হাহাকার করে উঠল। গতরাতে আলপিন পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল তা খেয়ালই করেনি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ার পরপরই তার খেয়াল হলো, আলপিনটি সে জায়গামতো লুকাতে ভুলে গেছে। এর মধ্যে আবার বোকার মতন মাকে ডেকে ফেলল সে। মা যদি বিছানায় আলপিন দেখতে পান, তাহলে তিনি হতভম্ব হয়ে যাবেন।
শুভ্রর মা জাহানারার ধারণা, তাঁর ছেলে আইনস্টাইন। ফিজিক্স আর ম্যাথমেটিকসের বই ছাড়া আর কিছু পড়ে না। কিন্তু শুভ্র যে গোপনে গোপনে আলপিন, সেলিনার গোপন কথা, ভালোবাসা প্রেম নয়, বোরকা পরা সেই মেয়েটি ধরনের বইও পড়ে; এটা জানতে পারলে তিনি ছোটখাটো একটা স্ট্রোক করবেন। তাই শুভ্র এ-জাতীয় বই সব সময় লকারে লুকিয়ে রাখে। মা স্ট্রোক করুন, এটা সে চায় না।

ছেলের ডাক শুনে জাহানারা রুমে ছুটে এলেন। গাঢ় মমতা নিয়ে ছেলের দিকে তাকালেন তিনি। কী অদ্ভুত ভঙ্গিতেই না সে বিছানার এদিক-সেদিক চশমা খুঁজছে। দিনের প্রথম ভাগে সব মানুষকেই সুন্দর লাগে, সেখানে শুভ্রকে দেবদূতের মতো লাগছে। জাহানারা কাজের মেয়েকে ডাকলেন, ‘সকিনা!’
‘জি, আম্মা।’
‘শুভ্রর মতো সুন্দর ছেলে কি তুমি তোমার জীবনে দেখেছ?’
‘জি, না।’
‘আমাকে খুশি করার জন্য কোনো কথা বলবে না। খুশি করানো কথা আমার পছন্দ না। সত্যিটা বলো।’
‘ভাইজানের মতো এমন লালটু মার্কা সুন্দর ছেলে আমি দেখিনি মা। তিনি বিশ্বসুন্দর প্রতিযোগিতায় হেসেখেলে ফার্স্ট হবেন। আর প্যাকেজ নাটকের নির্মাতারা তো তাঁকে নিয়ে কাড়াকাড়ি ফেলে দেবেন। আম্মা, ভাইজান প্যাকেজ নাটকে অভিনয় করেন না কেন? কী সুন্দর শমী, বিপাশা, অপি করিমদের হাত ধরে ভালোবাসার ডায়ালগ ছাড়তে পারতেন!’
জাহানারা থমথমে গলায় বললেন, ‘সকিনা, তুমি কি আমার সঙ্গে মশকরা করছ?’
‘জি, আম্মা।’
‘ফাজিল মেয়ে! তুমি কি জানো, এক থাপ্পড় দিয়ে আমি তোমার বত্রিশটা দাঁত ফেলে দিতে পারি?’
‘জানি বলেই তো মশকরা করছি, আম্মা। সকাল থেকে মাড়ির দুটা দাঁত ব্যথা করছে। আপনার থাপ্পড় খেয়ে যদি পড়ে, তাহলে ডেন্টিস্টের খরচ বেঁচে যাবে।’
সকিনা প্রায় দৌড়ে ঘর থেকে বের হলো।
জাহানারা বললেন, ‘তুমি যাচ্ছ কোথায়, সকিনা! দেখছ না, তোমার ভাইজান ঘুম থেকে মাত্র উঠেছে। তাকে এক গ্লাস ট্যাং বানিয়ে দাও, গরম পানিতে ট্যাং। শীতের সময় এলেই প্রতিদিন সে গরম পানিতে ট্যাং খায়, এটা তুমি ভুলে যাও কেন?’
জাহানারা দরজা ছেড়ে কাছে এসে শুভ্রকে বললেন, ‘কিরে বাবা, চশমা খুঁজে পাচ্ছিস না? দাঁড়া, তোর বাবাকে বলে কন্টাক্ট লেন্স কিনে দিতে হবে। আচ্ছা, কন্টাক্ট লেন্স কোথায় পাওয়া যায়, কত দাম-এসব কি জানিস তুই?’
শুভ্র লাজুক গলায় বলল, “লাস্ট সংখ্যা নকশায় ‘কন্টাক্ট লেন্সের খোঁজ-খবর’ নামে একটা ফিচার এসেছিল। ওখানেই সব লেখা আছে। তুমি দেখতে পারো। আমি কেটে রেখে দিয়েছি।”
জাহানারা এবার সত্যি সত্যিই হতভম্ব হয়ে গেলেন। তাঁর শরীর কাঁপতে লাগল। শুভ্র এসব কী বলছে! শুভ্র নকশা পড়বে কেন? শুভ্র কি ইদানীং কঠিন কঠিন বই পড়া বাদ দিয়ে নকশা পড়া শুরু করেছে? তিনি বিচলিত বোধ করছেন। ঠিক তখনই বাসার কলবেল বেজে উঠল। জাহানারা নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ‘দাঁড়া বাবা, আমি দরজাটা খুলে আসি।’
জাহানারা দরজা খুলতেই দেখলেন, হলুদ পাঞ্জাবি পরা এক দাড়ি-গোঁফের জঙ্গলের সঙ্গে শুকনোমতো বয়স্ক একটা লোক কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হলুদ পাঞ্জাবিওয়ালাই প্রথম কথা বলে উঠল, ‘জাহানারা খালা, আমাকে চিনতে পারোনি, আমি হিমু। ভালো নাম হিমালয়। বিশ্বাস না হলে ম্যাট্রিকুলেশনের সার্টিফিকেট দেখাতে পারি। ওই যে একবার তোমার হাত দেখে দিলাম।’
জাহানারা শুকনো গলায় বললেন, ‘ও!’
‘আর ইনি হচ্ছেন মিসির আলী। বিশিষ্ট সাইকিয়াট্রিস্ট। লজিক নিয়ে কাজ করেন। আর আমি কাজ করি অ্যান্টিলজিক নিয়ে। চিনতে পেরেছ?’
জাহানারা আবার শুকনো গলায় বললেন, ‘ও, আচ্ছা!’
মিসির আলী বিরক্ত মুখে হিমুর দিকে তাকালেন। এই ছেলে এত কথা বলছে কেন?
তিনি জাহানারার দিকে তাকালেন। চল্লিশের মতো বয়স। চোখের নিচে কালি পড়েছে। অযথাই টেনশন করেন। একটু আগে কান্নাকাটি করেছেন বোঝা যাচ্ছে। চোখ পিটপিট করছে। চোখের অশ্রুগ্রন্থি ঠিকমতো কাজ না করলে চোখ পিটপিট করে।
হিমু আবার খুব আগ্রহ নিয়ে বলল, ‘খালা চিনতে পারোনি?’
‘হ্যাঁ, পেরেছি! তুই ভবিষ্যৎ বলতে পারিস।’
যাক, শেষ পর্যন্ত খালা তাকে চিনতে পেরেছে। না পারলে মিসির আলীর সামনে বেইজ্জতি হতে হতো। কালকেই কোনো রিকশাওয়ালাকে পাঁচ টাকা ভাড়ার বদলে পাঁচ শ টাকার চকচকে একটা নোট গিফট করতে হবে।
তুই এমন হনুমানের মতো দাড়ি রেখেছিস কেন?’
‘হনুমানের দাড়ি থাকে নাকি খালা? ইন্টারেস্টিং তথ্য তো। কী বলেন স্যার?’ বলে সে মিসির আলীর দিকে তাকাল। মিসির আলী হাসতে গিয়ে আরেকটু কুঁজো হয়ে গেলেন। জাহানারা বললেন, ‘আছে কি না জানি না। তোকে যে হনুমানের মতো দেখাচ্ছে এটা জানি।’
‘চট করে দশটা টাকা বের করো তো খালা। সেলুন থেকে সেভটা খতম করে আসি।’
জাহানারা রাগে কটমট করে হিমুর দিকে তাকালেন। “যাক, বাদ দাও খালা। দাড়ি থাকলেই বরং চেহারায় একটা মহাপুরুষ-মহাপুরুষ ভাব আসে। ও আচ্ছা, যে কারণে এসেছি। খালা, শুভ্র কি বাসায় আছে? আজকে আমাদের এলাচি দ্বীপের ট্যুর-সংক্রান্ত একটা মিটিং আছে। এ ছাড়া ব্যবসায়িক আলোচনাও হবে। আমরা তিনজন মিলে ‘চলো যাই আমেরিকা’ নামে একটা কোম্পানি খুলেছি। ১০০ টাকার বিনিময়ে ইন্টারনেটে ডিভি ফরম পূরণ করার কোম্পানি। শুভ্র এটার ৫০% পার্টনার। আমি আর মিসির আলী স্যার ২৫% করে।”
জাহানারা আবার চোখে অন্ধকার দেখলেন। কই, এসব কথা তো শুভ্র তাঁকে বলেনি। সারা দিন খালি বাপের সঙ্গে গুটুর গুটুর। জাহানারা নিজেকে সামলে নিয়ে ওদের ভেতরে আসতে ইশারা করলেন। তারপর শুভ্রর রুম দেখিয়ে বললেন, ‘যা, শুভ্রর রুমে চলে যা। আর শোন, শুভ্র ওর চশমাটা খুঁজে পাচ্ছে না। তুই কি ওর চশমাটা খুঁজে পেতে হেলপ করবি?’
হিমু হেসে বলল, ‘খালা, তুমি কোনো চিন্তা করবে না। আমরা খুঁজে দেব। আমরা দুজন খুঁজে না পেলে বাংলাদেশের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের দুর্দান্ত-দুঃসাহসী স্পাই মাসুদ রানাকে ভাড়া করব। প্রয়োজনে সিআইএকে খবর দেব। সিআইএর প্রধান আমার ঘনিষ্ঠ আÍীয়। আমার কথা শুনলেই বাপ-বাপ করে চলে আসবে শুভ্রর চশমা খুঁজে দিতে।’
জাহানারা আবার রাগী গলায় বললেন, ‘খবরদার, আমার সঙ্গে ফাজলামি করবি না।’
‘জি আচ্ছা।’ বলে হিমু মিসির আলীকে নিয়ে শুভ্রর রুমের ভেতর চলে গেল।
ওদের দেখেই শুভ্র বলল, ‘আরে হিমু ভাই আর মিসির আলী স্যার যে। ইস! হিমু ভাই তোমার দাড়িগুলো যা সুইট লাগছে না! সরি, আমি ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি করে ফেলেছি। গতকাল রাতে ঘুমাতে একটু বেশি দেরি করে ফেলেছিলাম। একটা বই পড়ছিলাম।’
মিসির আলী মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী বই শুভ্র?’
শুভ্র একটু বিব্রত হয়ে বলল, ‘না না, মানে, না, ওটা হলো কোয়ান্টাম ফিজিকসের একটা বই।’ ‘ও আচ্ছা।’ মিসির আলী স্পষ্টতই বুঝলেন, শুভ্র মিথ্যে কথা বলছে। কারণ, মিথ্যে বলার সময় রক্তচাপে তারতম্য হয়। ব্লাড সার্কুলেশন অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। কণ্ঠ জড়িয়ে যায়। মিসির আলী বললেন, ‘তোমার মায়ের কাছে শুনলাম, তুমি নাকি চশমা খুঁজে পাচ্ছিলে না? দেখি, আমরা খুঁজে দেখি। দুজনে এদিক-ওদিক চশমা খুঁজতে লাগল। এমন সময় বিছানার ওপর পাতলা আকারের একটা ম্যাগাজিন পেয়ে হিমু সেটা হাতে নিতেই তার মুখের চেহারা যেন বদলে গেল। হিমু চোখ কপালে তুলে বলল, ‘শুভ্র, তুই ইদানীং আলপিনও পড়িস নাকি।’
শুভ্র অপ্রস্তুতভাবে বলতে লাগল, ‘না, না, ওটা আমার না। কোথা থেকে এসেছে আমি জানি না। এসব ফালতু জিনিস আমি পড়ি নাকি? মনে হয় মায়ের কাণ্ড।’
মিসির আলী মৃদু হাসলেন। তার কিছুণ পর তারা তিনজনই এলাচি দ্বীপে যাওয়ার প্ল্যান করতে বসলেন।

পরিশিষ্ট
এক মাস পরের ঘটনা। মিসির আলীর শরীর খারাপ সত্ত্বেও হিমু আর শুভ্রর টানাটানিতে বাধ্য হলেন শেষ পর্যন্ত এলাচি দ্বীপে আসতে। এলাচি দ্বীপে এসে তিনি অভিভূত। চারদিকে গৃহত্যাগী জ্যোৎনা। এর মধ্যে তাঁরা এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়ান। একদিন হিমু জ্যোৎনা দেখার অভিনব একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করল। বুক পর্যন্ত মাটির নিচে পুঁতে জ্যোৎনা দেখা নাকি খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। শুভ্র হিমুর এককথায় রাজি। হিমুর সঙ্গে কাপড়চোপড় খুলে গর্তে বসে জ্যোৎনা দেখায় তার অসীম আগ্রহ। কিন্তু মিসির আলী কোনো আগ্রহই বোধ করছেন না। তিনি গলে গলে পড়া গৃহত্যাগী জ্যোৎনায় একা একা হাঁটেন আর ভাবেন, তিনি মারা গেছেন। শবদেহ বিছানায় পড়ে আছে, একজন কেউ গভীর অন্বেষণে গাইছে, ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়...’
লেখাটি আলপিনের ঈদসংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। ২০০০ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে।

কোন মন্তব্য নেই: