পৃষ্ঠাসমূহ

স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোনো বই পড়ার সময় সাবধান। ছাপার ভুলের কারণে আপনার মৃত্যু হতে পারে। মার্ক টোয়েন, সাহিত্যিক।। আমি সব সময়ই বিখ্যাত ছিলাম, কিন্তু এত দিন সবাই জানত না। লেডি গাগা, আমেরিকান পপশিল্পী।। যদি আপনার পিতা-মাতার কোনো সন্তান না থাকে, তাহলে আপনারও নিঃসন্তান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ডিক ক্যাভেট, সাবেক আমেরিকান টিভি উপস্থাপক।। ঈশ্বর রোগ সারান কিন্তু সম্মানী নেন ডাক্তার। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, আমেরিকান রাজনীতিবিদ, লেখক ও বিজ্ঞানী।। প্রলোভনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো তার বশবর্তী হওয়া। অস্কার ওয়াইল্ড, অভিনেতা ও সাহিত্যিক।। ভুল করার পরও কেউ হাসার অর্থ হলো, সে ইতিমধ্যে দোষ চাপানোর মতো অন্য কাউকে পেয়ে গেছে। রবার্ট ব্লক, সাহিত্যিক।। আমি অনেক বছর যাবৎ আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলিনি। আমি তার বক্তব্যে বাধা দিতে চাই না। রডনি ডেঞ্জারফিল্ড, আমেরিকান কৌতুকাভিনেতা।। একজন পুরুষ বিয়ের আগ পর্যন্ত অসম্পূর্ণ থাকে এবং বিয়ের পর সে শেষ হয়ে যায়। সা সা গাবুর, হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান অভিনেত্রী।। সবার হৃদয়ে নিজের নামটি লিখুন, মার্বেল পাথরের দেয়ালে নয়। চার্লস স্পার্জান, ব্রিটিশ লেখক।। শুধু দালমা আর জিয়াননিনাই আমার বৈধ সন্তান, বাকিরা সবাই আমার অর্থ ও ভুলের ফসল। ডিয়েগো ম্যারাডোনা, সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার।। কোনো পুরুষ যদি স্ত্রীর জন্য গাড়ির দরজা খুলে দেয়, তাহলে হয় গাড়িটা নতুন অথবা তার নতুন বিয়ে হয়েছে। প্রিন্স ফিলিপ, ব্রিটেনের রাজপুত্র।। আমি শিশুদের ভালোবাসি। কারণ আপনারা জানেন কি না জানি না, আমি নিজেও শিশু ছিলাম একসময়। টম ক্রুজ, হলিউড অভিনেতা।। জীবনের সব কাক্সিত বস্তুই হয় অবৈধ, কিংবা নিষিদ্ধ, কিংবা চর্বিযুক্ত, কিংবা ব্যয়বহুল, নয়তো বা অন্য কারও স্ত্রী। গ্রুশো মাক্স, সাহিত্যিক।। যতক্ষণ আপনি কোনো ছেলেকে অপছন্দ করবেন, সে আপনার জন্য তার সর্বস্ব ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকবে। যখন আপনি তাকে ভালোবাসতে শুরু করবেন, ততণে সে তার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বিয়ন্স নোয়েলস, মার্কিন গায়িকা ও অভিনেত্রী।। আমার একটা অ্যালার্ম ঘড়ি আছে। মজার বিষয় হলো, সেটা কোনো আওয়াজ করে না। এটা আলো দেয়। যতই সময় যেতে থাকে, সেটি ততই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হতে থাকে। একপর্যায়ে আলোর চোটে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমার সেই অ্যালার্ম ঘড়িটার নাম জানালা। জে লেনো, মার্কিন কৌতুক অভিনেতা।। আমাকে একটি গিটার দাও, আমি সেটা বাজাব। আমাকে একটি মঞ্চ দাও, আমি গাইব। আমাকে একটি অডিটরিয়াম দাও, আমি তা পরিপূর্ণ করে দেব। এরিক ক্যাপটন, সংগীতজ্ঞ।। আমার স্বামীর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে আমি কখনো প্রেমে পড়িনি, কয়েকবার পা রেখেছিমাত্র। রিটা রুডনার, মার্কিন কৌতুক অভিনেত্রী ও লেখিকা।। অবিবাহিত পুরুষদের ওপর উচ্চহারে কর বসানো উচিত। তারা কেন অন্যদের চেয়ে সুখে থাকবে? অস্কার ওয়াইল্ড, আইরিশ লেখক ও কবি।। বিয়ে হলো কল্পনার কাছে বুদ্ধির পরাজয়। দ্বিতীয় বিয়ে হলো আশার কাছে অভিজ্ঞতার পরাজয়। স্যামুয়েল জনসন, ব্রিটিশ লেখক।। বিয়ে হলো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার মতোই প্রাকৃতিক, অযৌক্তিক এবং ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। লিসা হফম্যান, অভিনেতা ডাসটিন হফম্যানের স্ত্রী।। বুকমার্ক কেনার জন্য ডলার খরচ করার দরকার কী? ডলারটাকেই বুকমার্ক হিসেবে ব্যবহার করুন। স্টিভেন স্পিলবার্গ, চলচ্চিত্র পরিচালক।। আমার মনে হয়, যেসব পুরুষের কান ফুটো করা, তারা বিয়ের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত। কারণ, তারা ব্যথা সহ্য করেছে এবং অলংকারও কিনেছে। রিটা রুডনার, আমেরিকান কৌতুকাভিনেত্রী, লেখিকা ও অভিনেত্রী।। ডায়েটের প্রথম সূত্র হলো : খাবারটা যদি তোমার খেতে খুব ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই জিনিসটা তোমার জন্য তিকর হবে। আইজ্যাক আজিমভ, বিজ্ঞান কল্পকাহিনিকার।। আমার জন্মের পর আমি এত অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে পাক্কা দেড় বছর কথাই বলতে পারিনি। গ্রেসি অ্যালেন, মার্কিন কৌতুকাভিনেত্রী।। আমি কোনো দিন বিখ্যাত হতে পারব না। আমি কিচ্ছু করি না। কিছুই না। আগে দাঁত দিয়ে নখ কাটতাম। এখন তা-ও করি না। ডরোথি পার্কার, আমেরিকান রম্যলেখিকা।। আমি কখনোই আমার স্কুলকে আমার শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটাতে দিইনি। মার্ক টোয়েন, সাহিত্যিক।। সত্যবাদিতাই সর্বোত্তম পন্থা, যদি না আপনি একজন অসাধারণ মিথ্যেবাদী হতে পারেন। জেরোম কে জেরোম, ব্রিটিশ লেখক।। আলস্য পুরোপুরিভাবে তখনই উপভোগ করা সম্ভব, যখন হাতে প্রচুর কাজ থাকে। জেরোম কে জেরোম, ব্রিটিশ লেখক।। যখনই টিভিতে পৃথিবীর সব অনাহারি ও দরিদ্র শিশুকে দেখি, কান্না ধরে রাখতে পারি না। মনে হয়, ইশ, আমার ফিগারটাও যদি ওই রকম হতো। মারায়া ক্যারি, সংগীতশিল্পী।। সুষম খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো খাদ্য। ফ্র্যান লেবোউইটজ, মার্কিন লেখক।। ধূমপান মৃত্যু ডেকে আনে। যদি আপনার মৃত্যু ঘটে, তাহলে জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ আপনি হারাবেন। ব্রুক শিল্ডস, অভিনেত্রী।। বক্সিংয়ে এ পর্যন্ত ইনজুরি, মৃত্যু-দুটোই হয়েছে। কোনোটিই তেমন মারাত্মক ছিল না। অ্যালান মিন্টার, বক্সার।। অন্যের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে সব সময় যাওয়া উচিত। তা না হলে তারাও আপনার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে আসবে না। ইয়োগি বেরা, বেসবল খেলোয়াড়।। এমন কাজ তোমার করার দরকার নেই, যেটা আগামীকাল অন্যের ঘাড়ে এমনিতেই চাপবে। ডেভিড ব্রেন্ট, অভিনেতা।। আমাকে কোনো প্রশ্ন কোরো না, তাহলে আমাকেও কোনো মিথ্যা বলতে হয় না। ওলিভার গোল্ডস্মিথ, আইরিশ লেখক ও কবি।। মডেলরা হলো বেসবল খেলোয়াড়দের মতো। আমরা খুব তাড়াতাড়ি বিপুল অর্থের মালিক হই, কিন্তু বয়স ৩০ হতে না হতেই আবিষ্কার করি যে আমাদের উচ্চশিক্ষা নেই, কোনো কিছু করারই যোগ্যতা নেই। কিন্তু আমরা খুবই বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত। এমন সময় সবচেয়ে বুদ্ধির কাজ হলো কোনো মুভিস্টারকে বিয়ে করে ফেলা। সিন্ডি ক্রাফোর্ড, মডেল।। ফিলাডেলফিয়ার পথঘাট খুবই নিরাপদ। শুধু মানুষই সেগুলোকে অনিরাপদ বানিয়ে রেখেছে। ফ্রাংক রিজো, আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার সাবেক মেয়র।। সব সময় মনে রাখবেন, আপনি অনন্য। ঠিক আর সবার মতো। মার্গারেট মেড, নৃতত্ত্ববিদ।। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাগের মাথায় কখনো বাচ্চাদের মারবেন না। আমার প্রশ্ন হলো, তাহলে কখন মারব? মনে যখন আনন্দ থাকে তখন? রোজেইন বার, লেখক।। টেলিভিশন আমার কাছে খুবই শিক্ষামূলক। বাড়ির সবাই যখন টেলিভিশন দেখে, আমি তখন অন্য ঘরে গিয়ে বই পড়তে শুরু করি। গ্রুশো মার্ক্স, কৌতুকাভিনেতা।। হাল ছেড়ো না। একটা ডাকটিকিটকে দেখো। নিজ গন্তব্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত তা একটি খামের সঙ্গেই লেগে থাকে। জশ বিলিংস, লেখক।। কেউ মহৎ হয়েই জন্মায়, কেউ অনেক চেষ্টা করে মহৎ হয়। বাকিরা পাবলিক রিলেশন অফিসারদের ভাড়া করে। ড্যানিয়েল জে বুরর্স্টিন, ইতিহাসবিদ।। বাস্তব ও কল্পকাহিনির মধ্যে পার্থক্য হলো, কল্পকাহিনিকে সব সময় যুক্তিপূর্ণ হতে হয়। টম ক্যান্সি, লেখক।। অস্ট্রেলিয়ার মানুষের অন্যতম প্রিয় শখ হচ্ছে কবিতা না পড়া। ফিলিস ম্যাকগিনলে, লেখক।। চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য মানুষের ব্লাডারের সহ্যমতার সমানুপাতিক হওয়া উচিত। আলফ্রেড হিচকক, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক।।

শনিবার, ১০ জুলাই, ২০১০

ইহার নাম ফেসবুক

সিমু নাসের
গল্পটা অনেক প্রাচীন। স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে সুখী পরিবার বাবার। সামান্য মাইনের চাকরি করেন তিনি, তবে চরিত্রের প্রয়োজনে খুব সৎ। কাজেই সংসারে অভাব-অনটনও নিত্যসঙ্গী। তাঁর দুই ছেলে গান গেয়ে গেয়ে স্কুলে যায় আর আসে। একদিন বড়লোক চৌধুরীর (যার একটি ফুটফুটে কন্যা আছে, বড় হয়ে নায়িকা হবে) রোষানলে পড়ে অন্যায়ের কাছে হার না মেনে তার পোষা গুন্ডার গুলি খেয়ে মারা যাবেন বাবা, বসতভিটায় দাউদাউ করে জ্বলতে থাকবে আগুন। ছোট ছেলেকে কোলে করে একদিকে ছুটে যাবেন মা, অন্যদিকে বড় ছেলে। হারিয়ে যাবে দুই ভাই। গল্পের শেষে অথবা মাঝামাঝিতে দুই ভাই-ই (এদের একজন নায়ক) তখন অনেক বড়। দেখা-সাক্ষাৎ হলেও পরিচয় নেই। মনের আনন্দে একদিন এক ভাই সেই ছোট্টবেলায় স্কুলে যাওয়ার পথে গাওয়া গানটি গেয়ে উঠবে আর
অন্য ভাই সেটি শুনে দু-একবার ফ্লাশব্যাকে চলে যাবে আর বুঝতে পারবে এটাই তার হারিয়ে যাওয়া ভাই। তারপর দুর থেকে ‘ভা-ই-য়া’ বলে ছুটে এসে আলিঙ্গনাবদ্ধ হবে। আবহ সংগীতের সঙ্গে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সংলাপ ছোড়াছুড়ি চলবে কিছুক্ষণ। বাংলা চলচ্চিত্রের এই যে দুর্দান্ত মিলন, এর মূলে রয়েছে একটি গান−‘সিগনেচার টিউন’।
আজ এই একুশ শতকে এসে ‘সিগনেচার টিউন’-এর কাজটা করে দেয় ‘ফেইসবুক’। স্কুল, কলেজের দস্যিপনার সাথী, ছোট্টবেলায় হারিয়ে যাওয়া চৌধুরীদের ফুটফুটে কন্যা আর হাঁটুবেলার বন্ধুদের আজকাল অনেকেই খুঁজে বেড়ান ফেইসবুকে।
ফেইসবুকের জন্ন ইতিহাসও কিন্তু সেই খোঁজাখুঁজিরই ইতিহাস। ২০০২ সালের কথা। হার্ভার্ড পড়ুয়া মার্ক জুকারবার্গ বেশ মনোযোগ দিয়েই সে সময় ব্লগ লিখতেন। ব্লগের বিষয়বস্তু ছিল এক বালিকা। কিন্তু মার্ক অচিরেই বুঝে গেলেন, শুধু ব্লগ লিখে কাজ হবে না, এমন একটা কিছু করতে হবে যা তাঁকে নিয়ে যাবে ওই বালিকার পরানের গহিনে। ২০০৩ সালে মার্ক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। খেয়ালের বশেই ‘ফেইসম্যাশ’ নামে তৈরি করলেন এমন একটি নেটওয়ার্ক যাতে হার্ভার্ডের একই বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজের ছবি রাখতে পারে আর সেই সব ছবিকে ভাসিয়ে দিতে পারে মন্তব্যের বন্যায়। এই ফেইসম্যাশ থেকে দ্য ফেইসবুক, সেখান থেকে শুধুই ফেইসবুক। গুগল, মাইক্রোসফটের ২০০, ৩০০ কোটি ডলারের হাতছানিকে উপেক্ষা করে শুধুই এগিয়ে চলার ইতিহাস তাঁর।
আরে, এফবিইং (ফেইসবুকিং) ছাড়া আজকাল স্নার্ট হওয়া যায় নাকি? তাই তো বাংলাদেশের কম্পিউটার আর মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা আজ যেন ফেইসবুক প্রজন্ন। এ প্রজন্েন আছে ছেলে বুড়ো খোকা সবাই। শিক্ষার্থী থেকে করপোরেট ব্যক্তিত্ব, শিল্পী-সাহিত্যিক, খ্যাত-অখ্যাত সবার যেন সমাবেশ এই ফেইসবুকে। নিজের শিরোনাম (স্ট্যাটাস) বার্তায় সেই প্রজন্েনর মনের ভাবনাটা পলকা কথায় ছড়িয়ে পড়ে ইউনিকোডের সুসজ্জিত বিন্যাসে। ঢাকায় বৃষ্টি হলে তাই হাজারটা স্ট্যাটাসে বৃষ্টিবন্দনা দেখে বহুদিন দেশ ছাড়া জার্মানিতে পড়তে যাওয়া ছেলেটি যখন স্ট্যাটাস দেয়, ‘আহা কত দিন ঝুম বৃষ্টি দেখি না’, সেই হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে একযোগে। কেন তার হাহাকার হয়ে ওঠে আমার হাহাকার? কারণ সে আমার ফেইসবুক বন্ধু। আমার, আপনার বন্ধু কজন এটা জিজ্ঞেস করলে চট করে বলে ফেলা বেশ মুশকিল, অনেকক্ষণ ধরে হাতের গিঁট গুনতে হবে। কিন্তু ফেইসবুকের কল্যাণে বন্ধু এখন গাণিতিক সংখ্যায় প্রকাশের বিষয়। কারও বা ৯৮ কারও বা ২৫৯৮। সবারই এক পরিচয়−ফেইসবুক বন্ধু। ফেইসবুকের হিসাবমতে গড়ে সবার বন্ধুসংখ্যা ১২০। আর শুধু ঢাকা শহরেই ফেইসবুকের সদস্য এক লাখ ২০ হাজারেরও বেশি।
আচ্ছা ঠিক আছে, নতুন বন্ধুতে আপনার খুব একটা আগ্রহ নেই। তাহলে কিসে আগ্রহ আপনার? নতুন ব্যবহারকারী হিসেবে ফেইসবুকে আপনি করবেনটা কী! মুখ ফুটে বলতে হবে না। মাউসের ক্লিকে শুধু খুঁজে নিন ৫২ হাজার প্রোগ্রাম থেকে আপনার পছন্দেরটি। আরে কত যে মজা সেখানে। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই। লাইভ অ্যাপ্লিকেশন নামে একটা প্রোগ্রাম দিয়ে পোষা প্রাণী পাওয়া যায়। উহু পোষ্য হিসেবে ছোট্ট হাতি গাবলু আর কুকুর গুল্লুকে শুধু শোকেসে রেখে দিলেই হবে না, নিয়মিত যত্ন-আত্তি নিতে হবে। যত্ন না নিলে, না খাওয়ালেই সপ্তাহ খানেকের ভেতরই পটল তুলবে সেগুলো।
বগুড়া মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্রী সুমির প্রিয় প্রোগ্রাম বিভিন্ন ধরনের কুইজ। সে কবে মারা যাবে, কবে তার বিয়ে হবে, বিয়ে হলে বাচ্চাকাচ্চা কয়টি হতে পারে−এসব দেখেই নাকি তার অনেক মজা লাগে। পাঁচটি অ্যাডজেকটিভ দিয়ে একজনকে ডেসক্রাইব করার ‘আই ডেসক্রাইব’ অনেক প্রিয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ুয়া রিনথির। কয়েক বাক্যেই একজন সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায় সেখানে। তবে সর্বসম্মতিক্রমে ফেইসবুকের সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ‘স্ট্যাটাস’। ব্যক্তিজীবনে আপনার আশানুরূপ স্ট্যাটাস না থাকতে পারে। কিন্তু ফেইসবুকের দুনিয়ায় আপনি নিজেকে সাজাতে পারেন বিচিত্র স্ট্যাটাসে।
আনন্দ ছাড়া জীবন অর্থহীন, ফেইসবুকেরও একই মত। ফেইসবুকের প্রতি ক্লিকেই সিরিয়াস সব বিষয়ের পাশাপাশি ছড়িয়ে আছে রাশি রাশি আনন্দ। বেশ কয়েক মাস আগে নাট্যকার আনিসুল হক টেলিভিশনের জন্য লিখেছিলেন নাটক ফেইসবুক। তরুণ কবিদের কবিতায় ঢুকে যাচ্ছে ফেইসবুক, ফেইসবুকে লেখা হচ্ছে ফেইসবুককাব্য। এমনকি একজনের স্ট্যাটাসের একটি বাক্য ধরে একের পর এক বহুজন মিলে লিখে ফেলছেন বড়সড় কাব্য। এসব মিলিয়েই ফেইসবুক আমাদের দেশে শুধু ভার্চুয়াল দুনিয়ায় না থেকে ঢুকে পড়েছে শিল্প, সংস্কৃতি, কবিতা আর নাটকে।
যে ছবির অ্যালবাম এত দিন আলমারিবন্দী হয়ে ছিল, ফেইসবুকের কল্যাণে সেটা এখন প্রদর্শনী কক্ষে। অনেকে ছবিই তুলছেন ফেইসবুকে ‘আপ’ করবেন এই কথা মাথায় রেখে। সব ধরনের ছবিই তুলে ধরতে পারেন আপনি সেখানে−সিরিয়াস ফটোগ্রাফি, কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ছবি অথবা নিছকই মজার ছবি। আর যদি ছবি না হয়ে ভিডিও হয়। চিন্তা নেই, তারও ব্যবস্থা আছে। প্রতি মাসে সাড়ে আট হাজার কোটি ছবির পাশাপাশি আট কোটি ভিডিও প্রকাশকরে ব্যবহারকারীরা।
বন্ধুদের জন্নদিন মনে করিয়ে দেবে ফেইসবুক। তিন দিন আগে থেকে জানাতে থাকবে কবে কার জন্নদিন। হালকার ওপর দিয়ে সারতে চাইলে ফেইসবুকের গিফট প্রোগ্রাম থেকেই পাঠিয়ে দিতে পারবেন ছোট্ট, সুন্দর একটা পুতুল। এই গিফটেরও আছে রকম ফের। ‘গ্রোয়িং গিফট’ থেকে পাঠানো উপহারগুলো দিন যাবে আর নিজ থেকেই বড় হতে থাকবে। মনে করুন কাউকে আপনি একটি বীজ উপহার পাঠালেন। কয়েক দিনের ভেতরই সেই বীজ গাছ হয়ে ফুল ফুটে সৌরভ ছড়াতে থাকবে বন্ধুর প্রোফাইলে। যে সময়টা আপনি অনলাইনে বসেছেন সে সময়ে কোন কোন বন্ধু অনলাইনে আছেতা যেমন
বাইরের আবহাওয়া এখন চরম গরম। সেই গরমকে মাথায় রেখে এসি না হোক চলুন একটু ফেইসবুকের ফ্যান ক্লাবের দুনিয়ায় একটু উঁকি মারি। কার কার ভক্ত আপনি? অমুকের অভিনয়ের তমুকের লেখার বা অমুক পণ্যের। হয়ে যান তাদের ফ্যান।
এবার একটু কাজের কথায় আসি।
সদ্য স্মাতক ইকবাল হোসেন। তিন বন্ধু মিলে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘রেসস্কেচ’ নামের একটি পরামর্শক সংস্থা। ফেইসবুকই তাঁদের অফিস, ভার্চুয়াল অফিস। সেখানে প্রতিষ্ঠানের নামে একটি গ্রুপ খুলে ‘ডিসকাশন ফোরাম’-এ আলোচনার মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের কর্মকান্ড। এই তো সেদিন একজনকে দেখা গেল লিখিত স্ট্যাটাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের জন্য লোক খুঁজছেন একজন। পণ্যের প্রচার থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সবই আছে ফেইসবুক দুনিয়ায়।
তাই তো সারা বিশ্বে ফেইসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ২০ কোটিরও বেশি। পরিসংখ্যান বলে ২০ কোটির মধ্যে তিন কোটি ব্যবহারকারীই মোবাইল ফোন থেকে ফেইসবুক ব্যবহার করছে। কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এমন প্রশ্ন তুলে অনেক অফিস-আদালত ফেইসবুকের ব্যবহার বন্ধ করে রেখেছে। সেই সঙ্গে সিরিয়া, ইরানসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই ফেইসবুক ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও ফেইসবুক দুনিয়ায় প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে হাজার হাজার নতুন ব্যবহারকারী। আরে যোগাযোগ আর আনন্দের এমন এক মাধ্যম থেকে কার সাধ্য মানুষকে দুরে রাখে?
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ফেইসবুকে আপনার আপ করা সব ছবি, ভিডিও বা লেখা সবই কিন্তু ফেইসবুকের সম্পত্তি। ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ চাইলেই সেসব তাদের যেকোনো কাজে লাগাতে পারে। বিশ্বাস না হলে তাদের টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন অংশে আগেই একটু চোখ বুলিয়ে নিন। আর ফেইসবুকে কিন্তু রয়েছে অনেক ছদ্মবেশী, তাদের থেকেও সাবধান!

লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় প্রথম আলোর শুক্রবারের ক্রোড়পত্র প্রজন্ম ডট কম-এ ২৪ এপ্রিল ২০০৯ (সম্ভবত)।

কোন মন্তব্য নেই: