ইমদাদুল হক মিলনের প্যারডি লিখেছেন সিমু নাসের
সাত সকালে দরজায় টুকটুক শব্দ।
ওমরের এখনো ঘুম ভাঙেনি। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে সে বলল, ‘কে?’
‘ওমর, আমি তোমার ভাবি। ওঠো, ৮টা বাজে। আজ না তোমার এমজিএস গ্রুপে চাকরির ইন্টারভিউ।’
‘ওহ্। প্লিজ, সুইটি ভাবি, আর একটু ঘুমাই।’
‘উহু! আর ঘুমানো চলবে না। দেখো তুমি না উঠলে কিন্তু এবার তোমার গায়ে আমি পানি ঢেলে দেব।’
‘প্লিজ ভাবি, এ কাজটি করো না। আমি না তোমার লক্ষ্মী দেবর। এখন আমি উঠতে উঠতে তুমি কড়া করে এক কাপ চা বানিয়ে আনো তো ঝটপট।’
‘ইস! এতক্ষন একজনকে নাশতা-টাশতা খাইয়ে বিদায় করলাম। এবার আরেকজনের খেদমত শুরু হলো।’
‘ওফ ভাবি! তুমি হলে আমার লক্ষ্মী ভাবি! ভাইয়া তাহলে অফিস চলে গেছে?’
‘হু! আজেরক চাকরিটা হলে দুদিন পরে তো তুমিও অফিসে যাবে আর এই ভাবির কথাও ভুলে যাবে। নিজের বউ নিয়ে মেতে থাকবে। দেখব কেমন বউ ঘরে আন?’
‘ওফ ভাবি! তুমি যে কিনা। সাত সকালেই এসব আজেবাজে কথা শুরু করলে। আমি মোটেও সেরকম ছেলে না যে বউ পেয়েই তোমাকে ভুলে যাব। আর নদীকে তো তুমি চেনোই। ও তোমাকে খুবই পছন্দ করে। ভাবি বলতে অজ্ঞান।
‘হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না। আজকে দুপুরে তোমার ভাইয়া বাসায় আসবে না। পারলে নদীকে নিয়ে ইন্টারভিউ শেসে বাসায় চলে এসো।’
‘ওকে ভাবি। ইউ আর সুইট। এবার যাও চা-টা নিয়ে এসো। আমি সেই ফাঁকে উঠে পড়ি।’
রুমা মানে ওমেরর ভাবি রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওমর ঝট করে বিছানায় উঠে বসল। ডান হাত দিয়ে সাইড টেবিল থেকে নদীর ছবিটা টেনে নিয়ে বাসি মুখেই একটা চুমু খের ছবিটার ওপর। এটা তার প্রতিদিনের রুটিন। প্রতিদিন সকাল বেলা নদীর ছবিটায় একবার চুমু না খেলে তার সারা দিন কী জানি করা হয়নি কী জানি করা হযনি মনে হয। ওমর খেয়াল করে দেখেছে নদীর ছবিটাকে সকালে একটু আদর করলে সারাটা দিন তার বেশ ভালো কাটে।
ছবি পর্ব শেষ হতেই ওমর বেসিনের আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল। গালে হাত বুলাতেই খেয়াল হলো দাড়ি বেশ খোঁচা খোঁচা আকার ধারণ করে তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। আয়নায় নিজের চেহারার দিকে তাকাল সে। ডান গালটা একটু কেমন জানি ফোলা ফোলা লাগছে। মনে হয় বেশ বড়সড় একটা ব্রণ কয়েকদিনের বেথর তার গারে উদয় হবে।
এমনিতে ওমরের স্বাস্থ্য চমৎকার। নিয়মিত ব্যায়াম করে, মাসগুলো পুরু, টকটকে ফর্সা চমৎকার চেহারা। চুলগুলো সবসময় সে ব্যাকব্রাশ করে। স্কিন টাইট টি শার্ট, জিন্স আর কেডস পরে বাসা থেকে বের হলে যে কোনো তরুণী তার দিকে দুবার তাকাতে বাধ্য। ভাবি তাই মাঝে মাঝে ঠাট্টা করে বলে, ‘নদীর প্রতি আমার খুব হিংসা হয়। কেন যে তোমার সঙ্গে আমার বিয়ের আগেই দেখা হলো না? তাহলে কে তোমার ভাইকে বিয়ে করত।’
ওমর ভাবনায় এত মগ্ন ছিল যে কখন ভাবি চা হাতে রুমে ঢুকেছে টেরই পায়নি। ঢুকেই সে বলল, কি এত আয়না দেখা, হয়েছে হয়েছে, আমার দেবরের চেহারা যথেষ্ট সুন্দর যে কোনো মেয়েই পটে যাবে।
‘ওফ! তুমি এত পাম মারতে পার ভাবি।’ ধোঁয়া ওঠা চা হাতে নিতে নিতে ওমর বলল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ ভাবি চা এর জন্য। ইচ্ছে করছে তোমাকে কোলে তুলে নাচতে। জানো ভাবি, আজকে আমার মনটা খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে চাকরিটা আজ হয়েই যাবে।
‘কয়টা বাজে সে খেযাল আছে, খুব তো গল্প করছ। দেখো নয়টা বাজে।’
‘ওহ গড! তাই নাকি। নদী তো সাড়ে নয়টায় আমার জন্য ওয়েট করবে। তাকে ইউনিভার্সিটি পৌঁছে দিয়ে তারপর আমাকে ইন্টারভিউদের জন্য যেতে হবে। ওকে ভাবি, তুমি এবার ভাগো। আমি তাড়াতাড়ি রেডি হই। বলে সে জোর করে ভাবিকে রুম থেকে বের করে দিল।
ওমর রুমে এস সেভিং কিট থেকে দ্রুত জিনিসপত্র বের করে সেভ করতে বসল। ঠোঁটে তার জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমার একটা গানের কলি। খুব তড়িঘড়ি করে শাওয়ারটাও সেরে নিল। টাওয়েলটা গলায় ঝুলিয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে এল। বের হয়েই সে ‘ভাবি, দ্রুত নাশতা দাও’ বলে কাপড় চোপড় পরতে লেগে গেল।
ভাবি বলল,‘ তোমার নাশতা রেডি, চলে আসো।’
ওয়ারড্রোব খুলে ওমর তার শার্ট বাছতে বসল। অনেক বাছাইয়ের পর সে পছন্দ করল অফ হোয়াইট কালারের একটা শার্ট। সঙ্গে ম্যাচ করে মেরুন রঙের টাই, কালো ট্রাউজার্স। ভাবির দেওয়া উডল্যান্ডের জুতোটা পড়ল সে। ফিটফাট হয়ে সে ডাইনিঙ-এ চলে এলো। ভাবি তার জন্য ওয়েট করছে। তড়িঘড়ি করে নাশতা করে নিল সে। মোটকথা এক গ্রাসে গিলল।
ভাবি বলল, ‘আস্তে খাও, না হয় তো বিষম খাবে।’ না ভাবি, একদম খেয়াল করিনি অনেক বাজে। নদী আজ আমাকে একদম খুন করে ফেলবে। প্রতিদিন আমি দেরি করে যাই আর ও রাগারাগি করে।’
তুমি দেরি করে যাবে আর নদী তোমাকে কোলে তুলে আদর করবে এমনটা আশা কর কেন?’
আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে, এবার প্লিজ ২০০ টাকা ধার দাও না। প্রমিজ করছি চাকরি পাওয়ার পর শোধ দিয়ে দেব।’
হয়েছে, হয়েছে আর শোধ দিতে হবে না। কত তুমি টাকা কামাবে আর সেই টাকা আমাকে শোধ দিবে। সূর্য তো পশ্চিম দিকে উঠবে। এই নাও ৫০০ টাকা। ২০০-এর বদলে ৫০০, আজ একটা বিশেষ দিন, তোমার চাকিরর ইন্টারভিউ, সেই উপলক্ষে আমার উপহার।’
ভাবি, থ্যাঙ্কস এগেইন। ইউ আর সো সুইট।’ বলে টাকাটা হাতে নিয়ে ওমর গ্যারেজ থেকে তার প্রিয় টিভিএস হোন্ডাটা বের করল। এক কিকে স্টার্ট দিয়ে ভোঁ করে বের হয়ে গেল। ভাবি বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে তাকে হাত নেড়ে বিদায় জানাল।
ওমর একবার ঘড়ি দেখছে আরেকবার অ্যাকসেলেটরের পাওয়ার বাড়াচ্ছে। বিপজ্জনকভাবে কয়েকটা গাড়িকে ওভারটেক কের সে ছুটে চলছে আসাদ গেটের আড়ং-এর সামনে। ওখানেই নদীর অপেক্ষা করার কথা। মোবাইল ফোনটা ঠিক সেই মুহুর্তে বেজে উঠল।
হ্যাঁ নদী, মাই সুইট হার্ট, এই তো আমি চলে এসেছি। আর পাঁচটা সেকেন্ড ওয়েট করো জান।’ ‘না না, প্রিজ রাগ করো না।’ ‘ওকে বাই।’
পাঁচ মিনিটের ভেতর ওমর পৌঁছে গেল আড়ং-এর সামনে। নদী সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল গাল ফুলিয়ে। ওমর হোন্ডার আর্ট বন্ধ করে এগিয়ে গেল নদীর দিকে নদী তখন গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে। ওমর নদীর সামনে গিয়ে হাত জোড় করল, প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দাও।’ তারপর টানতে টানতে নিয়ে হোন্ডার পেছনে বসাল।
এই নদী, এখনো গাল ফুলিয়ে বসে আছ, প্লিজ আমাকে শক্ত করে ধর, না হয় পড়ে যাবে কিন্তু।’ নদীকে কলা ভবেনর সামনে নামিযে দিয়ে ওমর ছুটল মতিঝিলের দিকে। ওখানেই এমজিএস কোম্পানির অফিস। শাহবাগ পেরিয়ে মৎস্যভবেনর দিকে যেতেই ওমর হঠাৎ দেখল বেশ সাহেব মতো এক ভদ্রলোক গলদঘর্ম হয়ে গাড়ির বনেট উঁচু করে রাস্তার মদ্যে গাড়ি টিক করার চেষ্টা করছে। ওমারের হঠাৎ করে সেই গল্পটা মনে পড়ল, ইনিই যদি এমজিএসের ইন্টারভিউ বোর্ডে আজ থাকেন তাহলে এখন যদি সে হেল্প করে তাহলে চাকরি তার নিশ্চিত। ওমর চার হোন্ডা দাঁড় করাল।
ক্যান আই হেল্প ইউ?’
ওহ শিউর, হোয়াট নট।’ ভদ্রলোক বলে উঠল। এরপর আধা ঘণ্টার পরিশ্রমে ওমর ওই লোকের গাড়ির সমস্যার সমাধান করে নিল। ধন্যবাদ বিনিময় পর্ব শেস হতে কালিঝুলি মেখেই ওমর রওনা হরো অফিসের উদ্দেশ্যে। এমনিতেই আধাঘণ্টা লেট।
হাঁপাতে হাঁপাতে সে গিয়ে ইন্টারভিউ ফেস করল। কিন্তু হায় সেখানে ওই লোক নেই। তার কালিঝুলি মার্কা চেহারা দেখে ইন্টারভিউ বোর্ড তাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করেই পরে যোগাযোগ করবে বলে জানিয়ে দিল।
তখনই নদীর ফোন, ‘অ্যঅই, চাকরির খবর কী?’
'চাকরিটা আমি পাইনি, নদী শুনছ।’ ওমরের দীর্ঘশ্বাস।
প্যারডিটি আলপিনের ঈদসংখ্যায় (২০০০ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে) প্রকাশিত।
৩টি মন্তব্য:
প্রথমে ভেবেছিলাম এটা বুঝি ইমদাদুল হক মিলনের লেখা। পরে বুঝলাম, তা নহে। ভালো হয়েছে।
When will you post again ? Been looking forward to this !
backlinks seo optimize backlinks backlink service
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন